এম.এ আজিজ রাসেল ::
বৃষ্টি হলেই পর্যটন নগরী কক্সবাজারের শহরের বাসিন্দাদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। মঙ্গলবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত হওয়া বৃষ্টিতে এই দৃশ্য ফুটে উঠে প্রকাশ্যে। এমনিতেই শহরের অধিকাংশ রাস্তার অবস্থা জরাজীর্ণ, কিছু রাস্তা এখনও কাঁচা। নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা, তারওপর চলে পাহাড় কাটা। এরমধ্যে হালকা বৃষ্টি হলেই বিপর্যয় নেমে আসে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহরে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে পর্যটকরাও।
বুধবারের ভারী বর্ষণে পর্যটন জোন বলে পরিচিত কলাতলীর প্রধান সড়ক, বড় বাজার, বার্মিজ মার্কেট, পেশকার পাড়া, বাজারঘাটা, টেকপাড়া, ফুলবাগ সড়ক, বার্মিজ স্কুল রোড, মাছ বাজার রাখাইন পাড়া ও লাইট হাউসের অধিকাংশ অলিগলি ডুবে যায়। এসব এলাকায় বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। গ্রীষ্মের বৃষ্টিপাতেই যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বর্ষা মৌসুম নিয়ে এখন থেকেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে কক্সবাজারবাসীর। ভারি বর্ষণ হলে কলাতলী রোড বা আশপাশের এলাকায় চলাচল একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়বে বলেও আশঙ্কা তাদের।
এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একদিকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার কার্যক্রমের ফলে সড়কে জমে আছে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ, অন্যদিকে অলি-গলির কোনও পাশেই নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা। সে কারণে হালকা বৃষ্টির পানি ও কাঁদা জমে আছে সড়কে। সেজন্য অলি-গলিতে গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটেও যাতায়াত কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে এলাকাবার বাসিন্দাদের জন্য।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, বজ্রমেঘের ঘনঘটা বৃদ্ধির ফলে কক্সবাজারসহ দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর প্রভাবে কক্সবাজারে ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ কারণে বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদী উত্তাল থাকায় মাছ ধরার ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযানকে নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারও এ সতর্ক সংকেত বলবৎ থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
সুগন্ধা পয়েন্টের একটি কফি শপের মালিক সায়মন আমিন বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পানি জমে যায় হাঁটু পরিমাণ। কিন্তু এটাই নাকি পর্যটনের শহর। লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রাস্তার দু’পাশে নেই কোনও ড্রেনেজ ব্যবস্থা। অবস্থা এভাবে থাকলে ভবিষ্যতে ব্যবসায় চরম ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকার ধানমন্ডি থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা জহির-শম্পা দম্পতি বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার এসেছিলাম হানিমুন করতে। কিন্তু বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটের যে অবস্থা, হোটেল থেকেই বের হতেই পারিনি।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বিশ্বের অন্যান্য পর্যটন শহরগুলো স্বচ্ছ, চকচকে। কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই কক্সবাজারের চিত্র উল্টো। দিনে দিনে এখানে বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা কমছে।
পৌরসভা অফিস সূত্রে জানা যায়, পুরো শহরে ড্রেনেজের কাজ চলছে। বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধাতা সৃষ্টি হয়েছে। বুধবারের বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসেন মেয়রের নেতৃত্বে কাজ করেছে কাউন্সিলররা। স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য ড্রেন নির্মাণ অতি দ্রুত সম্পন্ন হবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, পর্যটন জোনের সড়ককে উন্নীতকরণ, রাস্তার দু’ধারে নর্দমা নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার করা হচ্ছে। এই কারণে সাময়িক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। উন্নয়ন কাজগুলো শেষ হলে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে কক্সবাজার পৌরসভার চেহারাই পাল্টে যাবে।
পাঠকের মতামত: